শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক: স্টকহোম: আফ্রিকার দেশ মালিতে আল-কায়েদার সহযোগী সংগঠন ‘ইসলামিক মাগরেব’ এর হাতে প্রায় ছয় বছর জিম্মি থাকার পর গত জুনে মুক্তি পায় সুইডিস নাগরিক জোহান গুস্তাফসন। জঙ্গিদের হাতে বন্দি থাকাকালীন তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। এই ধর্মান্তর তার জীবন রক্ষা করেছে বলে এক সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছেন।
২০১১ সালের নভেম্বরে জোহান গুস্তাফসন একটি মোটরসাইকেল নিয়ে ভ্রমণে মালির শহর টিম্বাকতুতে পৌঁছান। দেশটিতে আগমনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন ‘ইসলামিক মাগরেব’ তাকে আটক করে।
জঙ্গিরা জোহান গুস্তাফসনসহ দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক স্টিফেন ম্যাকগভান ও সজাক রিজকে ধরে নিয়ে যায়। এটা ছিল তাদের সাহারা মরুভূমিতে ছয় বছরের কঠিন জিম্মিদশার শুরু।
জোহান গুস্তাফসনসহ সম্প্রতি তার ছয় বছরের সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমস’কে দেয়া সাক্ষাতকার জানান, এত দীর্ঘ সময়ের জন্য তাকে বাঁচাতে ইসলামে ধর্মান্তর মূল ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন, ‘এটা আমার জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেছে। সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে আমি দেখতে পাচ্ছি যে, এটি আসলে আমার পরিস্থিতি পরিবর্তনে সাহায্য করেছে।’
ধর্ম পরিবর্তন করার কারণে গুস্তাফসনকে উদ্ধার প্রার্থনার জন্য কমলা রঙের জাম্পস্যুট পোশাক পরে জিম্মি ভিডিওতে অংশ নিতে হয়নি। এই ধরনের ভিডিও’র মাধ্যমে অপহরণকারীরা প্রায়ই তাদের জিম্মিদের নিজ দেশ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
এর পরিবর্তে তাকে এবং অন্য যেসব বন্দিরা ধর্মান্তরিত হয়েছিল তাদেরকে অপহরণকারীরা নিজেদের সঙ্গে বসতে দিত এবং তাদের সঙ্গে একত্রে খাবার খেত। তাদের পাহারাও কিছুটা শিথিল ছিল।
তিনি বলেন, ‘একটি স্যান্ডবক্সের মধ্য আমাদের কয়েকজন তরুণদের একটি দল বেশ আরামেই দিন যাপন করেছি। বালি ঝড়, গাড়ির সমস্যা-এসব নিয়ে বসবাস করেছি।’
কিছুটা আশ্চর্যজনকভাবে তিনি বলেন যে, সে যদি সঠিক নিরাপত্তা পায় তাহলে তিনি সাহেলে ফিরে যাবেন। সাহেল হচ্ছে উত্তর সাহারা ও দক্ষিণ সুদানের সাভেনের মধ্যেবর্তী একটি ট্রানজিশন পথ।
তিনি বলেন, ‘আমি কেবল সেইসব লোককে মিস করতে যাচ্ছি না। একই সঙ্গে আমি মরুভূমি, বিশাল অঞ্চল, রাতের আকাশ ইত্যাদি হারাতে যাচ্ছি।’
গুস্তাফসন বলেন, ‘আপনি যখন সেখানে বাস করবেন, তখন আপনি ল্যান্ডস্কেপ শিখতে পারবেন। আপনি জানতে পারবেন বছরের বিভিন্ন সময়ে বাতাস কোথায় থেকে আসে। আপনি জানতে পারবেন ঝড় কিভাবে চলতে পারে। এই সব শুধুই রহস্যময়।’
ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশিরভাগ দেশই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় বসে না। কিন্তু ফ্রান্স, স্পেন ও সুইডেনসহ ইউরোপের অন্যান্য কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের জিহাদির হাত থেকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিপণ দিয়েছেন বলে মনে করা হয়।
এধরনের বিনিময় চুক্তি অত্যন্ত গোপনে পরিচালিত হয় এবং গুস্তফসনের মুক্তি সম্পর্কে স্টকহোমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
২০১১ সাল থেকে সাবেক ফরাসি উপনিবেশ মালি বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ২০১২ সালে ‘তুয়ারেগ’ বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীরা উত্তর মালির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের চেষ্টা করে। অন্যদিকে, আল-কায়েদার সহযোগী ‘ইসলামিক মাগরেব’ টিম্বাকতু দখল করে নেয়। সেখান থেকে তারা ২০১১ সালে গুস্তাফসনকে অপহরণ করে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জিহাদী পর্যবেক্ষণ গ্রুপ ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স’ জানান, চলতি বছরের জুন মাসে গুস্তাফসনকে মুক্তি দেয়ার পর, আল-কায়েদা’র মালি অ্যফিলিয়েট নুসরাত আল-ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন ১ জুলাই তারিখে একটি ভিডিও প্রকাশ করে। এতে অস্ট্রেলিয়া, কলম্বিয়া, ফ্রান্স, রোমানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সুইজারল্যান্ডের বন্দী মিশনারিদের দেখানো হয়। সূত্র: নিউজ উইক